হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৪০৪ সালের ১৬ আবান তারিখে (ইরানি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী) কুমের কুদস মসজিদে অনুষ্ঠিত জুমার খুতবায় আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন: ডিজিটাল জগৎ, প্রযুক্তির বিবর্তন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি আজ মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। এটি এক মহামূল্যবান ঘটনা ও সুযোগ, কারণ এটি মানুষের চিন্তা, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনের ফসল-যা আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ। আল্লাহ মানুষকে এমন শক্তি ও সক্ষমতা দিয়েছেন যাতে সে উদ্ভাবন করতে পারে, নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে এবং জগতের বিভিন্ন উপাদানকে নিজ লক্ষ্যের সেবায় নিয়োজিত করতে পারে।
তিনি বলেন, জ্ঞানার্জন ও বিজ্ঞান–প্রযুক্তির সীমানা সম্প্রসারণ একটি ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় বিষয়। ইসলাম এমন একটি কাঠামো প্রদান করে যা মানুষকে জ্ঞান, প্রযুক্তি, এবং প্রকৃতি অনুধাবনের পথে অগ্রসর হতে উৎসাহিত করে।
আরাফি আরও বলেন: ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের প্রতিটি উদ্ভাবন, সৃষ্টিশীলতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি একটি নৈতিক, ফিকহি এবং দার্শনিক কাঠামোর মধ্যে থাকা উচিত।
বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন ও মানব উদ্ভাবন আল্লাহর শক্তিরই প্রতিফলন, কেননা মানুষকে এমনভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে যে সে ক্রমাগত নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার করতে পারে।
মাজলিসে খোবারগানের (বিশেষজ্ঞ পরিষদ) সদস্য হিসেবে তিনি যোগ করেন: তথ্য ও জ্ঞানে দ্রুত প্রবেশাধিকার, তথ্যের জাতীয় ও বৈশ্বিক বিনিময়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনা-সবই আধুনিক প্রযুক্তির ইতিবাচক দিক।
প্রযুক্তি ব্যবস্থায় চারটি প্রধান হুমকির ক্ষেত্র
আরাফি বলেন: যেকোনো ভালো জিনিস যদি সঠিকভাবে পরিচালনা না করা হয়, তা নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনে।
ভার্চুয়াল স্পেস ও স্মার্ট প্রযুক্তিগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
এর দ্রুততা ও ব্যাপ্তির কারণে এর ক্ষতি ও ঝুঁকিগুলোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, কিছু ক্ষতি মানুষের মানসিক ও জ্ঞানগত দিককে প্রভাবিত করে-যেমন ইন্টারনেট আসক্তি, বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্নতা, এবং এমন আচরণগত বিকৃতি যা পরিবার ও নৈতিক ভিত্তিকে হুমকির মুখে ফেলে।
এই সমস্যা শুধু ইরানেই নয়, বরং গোটা মানবজাতির জন্যই সাধারণ চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন: এই ধরণের বিপদ অনেককে নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সীমা ভাঙার দিকে ঠেলে দেয়, যার ফলশ্রুতিতে সমাজে নৈতিক পতন, পরিবার ভাঙন ও ঈমানভিত্তিক জীবনের ক্ষয় ঘটে।
পাশাপাশি, এটি স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের শাসনব্যবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলে, কারণ বৈশ্বিক ঔদ্ধত্যবাদী শক্তিগুলো এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে জাতিগুলোর স্বাধীনতা হরণ, সংস্কৃতিতে অনুপ্রবেশ ও রুচিবোধ পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করতে চায়।
প্রযুক্তির সুযোগ ও হুমকি-দুই দিকেই ভারসাম্য দরকার
আরাফি বলেন: আমরা যেমন এই বুদ্ধিমান প্রযুক্তিগুলির অনন্য সুযোগে বিশ্বাস করি, তেমনি এর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও শাসনতান্ত্রিক হুমকিও অস্বীকার করি না।
এসব ঝুঁকির মোকাবিলায় আমাদের বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে হবে। পরিবার ও শিক্ষা ব্যবস্থায় এমনভাবে সন্তানদের গড়ে তুলতে হবে যেন তারা প্রযুক্তির এই হুমকিগুলো চেনে ও সামলাতে পারে।
এজন্য বিশেষ ধরনের নৈতিক ও শিক্ষামূলক তত্ত্বাবধান প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন: শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রেও প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান ও নীতিনির্ধারকদের এই বিপদসমূহ চিহ্নিত, বিশ্লেষণ ও মোকাবিলা করতে হবে।
কিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে, যা প্রশংসনীয়; তবে সংসদ, সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ডিজিটাল শাসনব্যবস্থা এবং এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মানবসম্পদ গড়ে তোলায় আরও মনোযোগী হতে হবে।
কারণ ইসলামী প্রজাতন্ত্রের মহান নেতা বহুবার এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।
জাতীয় স্বনির্ভরতার জন্য প্রযুক্তিগত অবকাঠামো জোরদার জরুরি
ইমাম আরাফি বলেন: বিদেশি প্রভাব থেকে নিজেদের ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কিছু জাতীয় অবকাঠামোগত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তবে তা এখনো যথেষ্ট নয়।
এ বিষয়ে আমাদের তাৎক্ষণিক ও মৌলিক জাগরণ প্রয়োজন-বিশেষ করে শিক্ষাব্যবস্থা ও শাসনব্যবস্থার দুই ক্ষেত্রে, যাতে বুদ্ধিমান প্রযুক্তির সঠিক ও নৈতিক ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেওয়া যায়।
আপনার কমেন্ট